সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না।
স্কুল-কলেজ খোলার দাবি করে ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন কি না সংসদ সদস্যদের তা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। টিকা দেওয়ার পর আমরা সব স্কুল খুলে দেব।’ করোনার টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যত লাগে টিকা কিনব। তার জন্য বাজেটে আলাদা টাকা রাখা আছে। বেশি দামে টিকা কিনে তা বিনামূল্যে জনগণকে দেওয়া হচ্ছে।’
গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় চলমান লকডাউনে দেশবাসীকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংসদে বিএনপি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার।
——
স্কুলে যায় না, তারাই বেশি সোচ্চার : সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুল–কলেজ–ইউনিভার্সিটিতে যায়, তারাই কিন্তু তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান না। তবে যাদের ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে না, ইদানীং সবচেয়ে বেশি সোচ্চার তারা! পড়ানোর মতো ছেলেমেয়ে নেই, তারাই বেশি কথা বলে। কিন্তু যারা যায়, তারা তো চাচ্ছে না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব স্কুল খুলে দেব। এর আগে আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম তখনই সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল যে, তার ধাক্কা এসে পড়ল আমাদের মধ্যে। এখন তো শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। লেখাপড়া শিখবে কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না তা সংসদ উপনেতাকে একটু বিবেচনা করতে বলব।
দেশের সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেব : বিশ্বের যে দেশেই করোনার টিকা আবিষ্কার হচ্ছে সেই দেশে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে যেখানে টিকা পাওয়া যাচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আরো টিকা আনব। যত লাগে টিকা কিনব। টিকা আসতে শুরু হয়েছে কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, দেশের ৮০ ভাগ লোককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। বেশি দামে টিকা কিনে তা বিনামূল্যে জনগণকে দেওয়া হচ্ছে।
সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, জনগণকে গত ঈদুল ফিতরে বার বার অনুরোধ করলাম আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না, কিন্তু অনেকেই তো সে কথা শোনেননি, সবাই ছুটে চলে গেছেন। আর তার ফলটা কি হলো? সবাই যদি আমাদের কথা শুনতেন তাহলে হয়তো আজকে এমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ত না। তারপরেও মানুষ আসলে যেতে চায় এটাই সমস্যা। তিনি বলেন, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শুধু সরকার না আমাদের দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রণোদনা দিয়েছি বিভিন্ন খাতে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। এমন কোনো শ্রেণি–পেশার মানুষ নেই যাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। যেহেতু আবার করোনা দেখা দিয়েছে, আমাদের সাধ্যমতো জনগণকে আবার সহায়তা দেব, কারো খাদ্য প্রাপ্তিতে যাতে অসুবিধা না হয় অবশ্যই সেই বিষয়টা আমরা দেখব।
সংক্রমণ এড়াতে মহামারিকালে সবাইকে এক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মহামারি প্রতিরোধে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো মেনে চললে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আমরা এখন লকডাউন ঘোষণা করেছি। আপনারা অন্ততপক্ষে নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন। মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার করা, আর যেন কোনোমতেই যেন সংক্রমিত না হন, তার জন্য দূরত্ব বজায় রাখা। এটা করতে পারলেই কিন্তু আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।